
.
সূর্য আহমেদ মিঠুন - স্টাফ রিপোর্টার : আজ ২২ এপ্রিল ২০২৫, সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জ জেলাতেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হলো ১৮তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০২৫। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় নানা কর্মসূচির।.
.
অনুষ্ঠানের শুরুতেই এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়, যেখানে অংশগ্রহণ করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার মান্যবর জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানবসম্পদ ও উন্নয়ন), সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, অটিজম বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিবেদিত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অটিজম পরিবার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনগণ।.
.
র্যালি শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয় হুইল চেয়ার বিতরণ অনুষ্ঠান। উক্ত অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলার সম্মানিত জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ১০ জন অটিজম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ করেন।.
.
হুইল চেয়ার প্রাপ্ত ৬৬ বছর বয়সী ইসমাইল হোসেন বলেন,.
“জেলা প্রশাসক মহোদয় শুধু একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন, তিনি একজন মানুষের মতো মানুষ। তার এই সহানুভূতিশীল আচরণ আমাদের জীবনে আশার আলো হয়ে এসেছে। তাঁকে নিয়ে আমার মনে অনেক আবেগ, অনেক কৃতজ্ঞতা।”.
.
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর নিবাসী ৪৮ বছর বয়সী মো: শাহজাহান বলেন, “এই হুইল চেয়ারটি আমার চলাফেরার জন্য নতুন একটি দিগন্ত খুলে দিল। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের প্রতি অন্তরের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আমাদের চোখে একজন প্রকৃত মানবদরদী মানুষ।”.
.
এসময় জেলা প্রশাসক মহোদয় বলেন, “বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সন্তান তারা কেউ আমাদের বোঝা নয়; বরং তাদের অনেকের মাঝে রয়েছে অভাবনীয় প্রতিভা। আমরা যদি তাদের পাশে থাকি, তাদের বিকাশে সহায়তা করি—তবে তারাও সমাজ ও দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।”.
.
তিনি আরও বলেন, “অটিজম সম্পর্কে আমাদের সমাজে আরও বেশি সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সমাজের বিত্তবান ও সচেতন নাগরিকদের অটিজম ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।”.
.
এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে জেলার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন।.
.
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক বলেন, “যারা অটিজমে আক্রান্ত, তারা কোনভাবেই সমাজের বোঝা নয়। তারা আমাদের মতোই মানুষ, শুধু একটু ভিন্নভাবে। আমাদের দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সক্ষমতা খুঁজে বের করা।”.
.
তিনি তাঁর আবেগঘন বক্তব্যে আরও বলেন, “সূর্যের যেমন তাপ না থাকলে তার মূল্য নেই, সাগরের যেমন ঢেউ না থাকলে সৌন্দর্য নেই, চিতার যেমন ক্ষিপ্রতা না থাকলে তা ভয়হীন—তেমনি মানবতাহীন মানবজীবনেরও কোন মূল্য নেই।”.
.
এই অনুষ্ঠানটি শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন ছিল না, বরং এটি ছিল মানবতা, সহানুভূতি ও অন্তর্ভুক্তির এক বাস্তব উদাহরণ। জেলা প্রশাসনের এই মহতী উদ্যোগ নারায়ণগঞ্জ জেলাকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য এক নতুন আশার ঠিকানা হিসেবে গড়ে তুলছে।.
.
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের এই আয়োজন সকলের মাঝে নতুন করে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের উদ্যোগ সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়বে—এই আশাই সকলের।.
ডে-নাইট-নিউজ / স্টাফ রিপোর্টার
আপনার মতামত লিখুন: